বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করবে এবং বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্তা থেকে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ এখন ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রের যুগে প্রবেশ করেছে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগর জামায়াত এই সমাবেশের আয়োজন করে।

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।

প্রধান অতিথি রফিকুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের কাছে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, গণহত্যার বিচার, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনাসহ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি, একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নষ্ট করতে চাইছে।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এই তিনটি দল দেশ শাসন করেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদী দল, আরেকটি দল অতিরিক্ত দালালি করার কারণে বিলুপ্ত হয়েছে এবং অন্য দলটি বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি ও লুটপাট বন্ধ হলেও এখন বাংলাদেশের মানচিত্র খেয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, অনেকেই বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একটি রাজনৈতিক দলের পকেটে ঢুকে গেছেন। আমরা এটি বিশ্বাস করতে চাই না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, তাঁর আশপাশের লোকজন এই দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের অসংখ্য নজির রয়েছে যখন প্রভিশনাল অর্ডার দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হয়েছে। তাহলে জুলাই সনদকে কেন আইনি ভিত্তি দেওয়া হচ্ছে না? অতি দ্রুত প্রভিশনাল অর্ডার দিয়ে জুলাই আন্দোলনকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম–১১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শফিউল আলম এবং চট্টগ্রাম–৮ আসনে মনোনীত প্রার্থী আবু নাছের। সমাবেশ শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করা হয়।

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। এই দাবির সমর্থনে আজ চট্টগ্রামসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে তাদের।

জামায়াতের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো:

1. জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা।
2. আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা।
3. অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
4. ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার করা।
5. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।