ছবি: সংগৃহীত
দেশের মৎস্য খাতে নারীদের অনস্বীকার্য অবদানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জোরালো দাবি উঠেছে। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মৎস্যনীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এক জাতীয় নীতি সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) এবং জাগো নারী’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এই সংলাপ মৎস্যজীবী নারীদের ক্ষমতায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহ-অর্থায়নে এবং অক্সফাম বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় 'এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টরস (ইডব্লিউসিএসএ)' প্রকল্পের অধীনে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে দুটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়—সিএনআরএস-এর 'নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন: লিঙ্গসমতা ও টেকসই মৎস্যের পথনির্দেশ' এবং জাগো নারী'র 'ঝুঁকি ও করণীয়: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নারী মৎস্যজীবীদের ওপর একটি গবেষণা'। উভয় প্রতিবেদনে নারী মৎস্যজীবীদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দাবি জানানো হয় এবং লিঙ্গসমতাভিত্তিক মৎস্যনীতি প্রণয়নের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
সিএনআরএস-এর উপদেষ্টা ড. আমিনুল ইসলাম তাঁর উপস্থাপনায় মৎস্যজীবীদের একটি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংজ্ঞা প্রস্তাব করেন। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, “বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক, লিঙ্গ নির্বিশেষে, মৎস্যজীবী হিসেবে পরিচিত হবেন যদি তাঁর আয়ের ৫০%-এর বেশি জলজ খাদ্যসম্পদ (মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি) থেকে আসে, অথবা তিনি যদি কর্মঘণ্টার অধিকাংশ সময় এই খাতে ব্যয় করেন। এর মধ্যে মাছ ধরা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংগ্রহ, ও বিপণন—সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হবে।” এই সংজ্ঞার মাধ্যমে পূর্ণকালীন ও মৌসুমি উভয় ধরনের মৎস্যজীবীকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও, ফিশারফোক আইডেন্টিটি কার্ড (এফআইডি) প্রদানের ক্ষেত্রে তিন ধরনের পরিচয়পত্রের প্রস্তাব করা হয়:
সরকারি স্বীকৃতির আশ্বাস
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ নারী মৎস্যজীবীদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি জানান, এ খাতে নারীদের বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও তারা অবমূল্যায়িত এবং মজুরিতে প্রায় ৩০% বৈষম্য বিদ্যমান। ভূমিহীনতার কারণে নারীরা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যে সমস্যার সম্মুখীন হন, তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, নারীদের জন্য এফআইডি কার্ড চালু হলে সরকারি সহায়তা ও ভর্তুকি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় মৎস্যনীতিতে নারী-সংবেদনশীল নীতি প্রতিফলিত হবে এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, সরকার লিঙ্গ সমতার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি স্বীকার করেন, এই খাতে নারীরা সম্পদে প্রবেশাধিকার ও স্বীকৃতির ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছেন। তিনি নারী জেলেদের সমস্যার সমাধানে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ভ্যালু চেনে নারীর অবদান ও চ্যালেঞ্জ
অক্সফাম বাংলাদেশের কোঅর্ডিনেটর শাহাজাদি বেগম মৎস্য ভ্যালু চেনের প্রতিটি ধাপে মহিলাদের অপরিহার্য ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, নারীরা আহরণ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে অবদান রাখলেও নিজেদের কাজের পূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত হন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক নারী মাছ বাছাইয়ের কাজে যুক্ত থাকায় আঙুলের ছাপ ক্ষয়ে যায়, যার ফলে তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। তিনি ভূমিহীন মৎস্যজীবী মহিলাদের আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ‘মান্তা’ সম্প্রদায়ের নারীদের নিয়ে বিশেষ জরিপ পরিচালনার প্রস্তাব করেন।
সংলাপে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মৎস্য খাতে সমন্বিত নীতির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ পরিবেশ ও নারীদের জীবিকা রক্ষায় অপরিহার্য। এই নীতি সংলাপটি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়।
বিষয় : ইডব্লিউসিএসএ
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh