এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম
রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে এক বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয় দানকারী এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে (৫৫) আটক করেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সকালে মিন্টো রোড এলাকায় সন্দেহজনক ঘোরাফেরার সময় এনায়েত করিমকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য বলছে, তিনি একজন মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন এবং নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে দাবি করেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর স্বপ্ন দেখাতেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেছেন।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, আটক এনায়েত করিমের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাকে প্রথমে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) আটক করে, পরে রমনা থানা পুলিশের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এনায়েত করিম গত ৬ সেপ্টেম্বর কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে নিউইয়র্ক থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। ঢাকায় প্রথম দুদিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন এবং পরের কয়েক দিন গুলশানে অবস্থান করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২০০৪ সালে সে দেশের পাসপোর্ট পান।
সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম জানিয়েছেন, তিনি বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে একটি নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি নিজেকে একটি বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বলেও দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গেও তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই তিনি বর্তমান সরকার পরিবর্তনের জন্য দেশে এসেছেন। তিনি সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বলে দাবি করেছেন।
এর আগেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার-দলীয় জোট সরকারের সময় (২০০১-০৬) এনায়েত করিমকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে সময়ও তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল।
ক্ষমতা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ
২০২১ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনায়েত করিম বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাতেন। সে সময় তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংস্থার ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেন। তখন তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে ব্যাংকক ও নেপালে বৈঠকও করেন।
একবার একজন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীকে মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য নির্দিষ্ট পোশাকের অর্ডার পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক লাখ মার্কিন ডলার জামানত হিসেবে জমা দিতে বলেন। ওই ব্যবসায়ী এত টাকা দিতে অসমর্থ হলে এনায়েত করিম নিজে ৫০ হাজার ডলার দেবেন এবং বাকি ৫০ হাজার ডলার ব্যবসায়ীকে দিতে বলেন। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওই ব্যবসায়ী এক রাজনৈতিক দলের প্রধানের মাধ্যমে ৫০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ ৪৩ লাখ ১০ হাজার টাকা এনায়েত করিমকে পাঠান। কিন্তু পোশাকের কোনো অর্ডার পাননি। এরপর ওই ব্যবসায়ী টাকা ফেরত চাইলে তিন চেকের মাধ্যমে তাকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর ওই ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটি ছেড়ে দেন।
বিষয় : অপরাধ প্রতারণা যুক্তরাষ্ট্র
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
