গোয়ালন্দ দরবার শরীফে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগ। ছবি: সংগৃহীত
নিজেকে ‘ইমাম মাহদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র দরবার শরিফ ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে উত্তেজিত জনতা। হামলাকারীরা তার কবর থেকে লাশ তুলে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এই সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার জুড়ান মোল্লাপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম রাসেল মোল্লা (২৮)। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের যতু মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুরুল হক প্রায় চার দশক আগে নিজেকে ‘ইমাম মাহদি’ দাবি করেন। এ নিয়ে বিতর্কের মুখে তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে ফিরে এসে গোয়ালন্দে একটি দরবার শরিফ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভক্ত-অনুসারী তৈরি করেন। গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার পরিবারের পক্ষ থেকে দরবার শরিফের ভেতরে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু একটি বেদিতে তাকে দাফন করা হয়, যার নকশা কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা হয়েছিল।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই ধরনের কবরকে শরিয়তবিরোধী আখ্যা দিয়ে এর অপসারণের দাবি জানাতে শুরু করেন। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে একাধিক বৈঠক করে এবং বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিল। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করেই পরিস্থিতি সহিংস রূপ নেয়।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, জুমার নামাজের পর ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর তারা নুরুল হকের বাড়ি ও দরবারের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা দরবার শরিফ ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ আগে থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও ইউএনও’র গাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। পরে র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর হামলাকারীরা নুরুল হকের বাড়ি থেকে তার লাশ তুলে নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে যায় এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার একজন অংশগ্রহণকারী, মো. আল আমিন বলেন, "নুরাল পাগল নিজেকে খোদা পর্যন্ত দাবি করেছেন। তার কর্মকাণ্ড শরিয়তবিরোধী। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এটা মেনে নিতে পারেনি।"
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, "জুমার নামাজের পর তৌহিদী জনতা জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং নুরুল হকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।" বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বিষয় : রাজবাড়ী জেলা হত্যা নুরাল পাগলা ঢাকা বিভাগ
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh