× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

১১ জুন ২০২৫, ০৩:০৭ এএম । আপডেটঃ ১১ জুন ২০২৫, ০৩:০৮ এএম

কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

ঈদের ছুটির দুই দিনে সাগরে নেমে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের একাধিক স্থানে ভাঙন ও গুপ্তখালের সৃষ্টি হওয়ায় সাগরে নামার আগে বিপদ টের পাচ্ছেন না পর্যটকেরা। পর্যটকদের উদ্ধারের আয়োজনও অপ্রতুল। ফলে সমুদ্রস্নানে যাওয়া পর্যটকদের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। নানা অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশ পর্যটন–সংশ্লিষ্টরা।

হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ ও টুরিস্ট পুলিশের হিসাবে, ঈদের ছুটিতে গত দুই দিনে অন্তত আড়াই লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। আগামী দুই দিনে আসবেন আরও তিন লাখ মানুষ। ভ্রমণে আসা ৯০ শতাংশ পর্যটক সাগরে নামেন গোসল করতে। কিন্তু গত তিন দশকেও সমুদ্রের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পর্যটন খাত থেকে হোটেল-মোটেল মালিক এবং সরকার বিপুল টাকা আয় করলেও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবাই উদাসীন। ১২০ কিলোমিটারের এই সৈকতের মাত্র ৫ কিলোমিটারে (কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত) উদ্ধার তৎপরতা চালানো জন্য বেসরকারি একটি সংস্থার ২৬ জন কর্মী রয়েছেন। অবশিষ্ট ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত পড়ে থাকছে। বিশেষ করে টেকনাফ, বাহারছড়া, পাটোয়ারটেক, ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, কলাতলী পয়েন্টের সৈকতে কেউ গোসলে নেমে নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর কেউ নেই।

পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীরা জানায়, গতকাল সোমবার বেলা দুইটার দিকে কলাতলী সৈকতে গোসলে নেমে রাজশাহীর শাহিনুর রহমান (৫৮) ও সিফাত রহমান (২০) নামের দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। আগের দিন রোববার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন মো. রাজীব (৩০) নামের এক পর্যটক। ৭ ঘণ্টার পর রাত ১২টার দিকে তাঁর লাশ ভেসে আসে। রাজীবের বাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরের দেওয়ানবাজার ভরাপুকুর এলাকায়। পেশায় তিনি গ্রাফিকস ডিজাইনার ছিলেন। একই দিন বিকেলে শৈবাল পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও একজন অজ্ঞাতপরিচয় পর্যটক। সোমবার দুপুরে ১২টার দিকে সৈকতে নাজিরারটেক পয়েন্টে নুরুল ইসলামের মরদেহ ভেসে আসে। একই সময় খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্প–সংলগ্ন বাঁকখালীর মোহনা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত আরও এক পর্যটকের মরদেহ। পুলিশের সন্দেহ—এটি পর্যটকের মরদেহ হতে পারে। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত দুই দিনে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন পর্যটক, একজন স্থানীয়। অপর দুজনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল রয়েছে, বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। গুপ্তখালের পাশে গোসলে নামতে নিষেধ করে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকেরা সেই নির্দেশনা অমান্য করে গোসলে নেমে বিপদে পড়ছেন।

সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে নতুন করে গুপ্তখালের কারণে পর্যটকদের ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানান সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন এবং গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। গুপ্তখাল যেখানে আছে এমন সৈকতে গোসলে নামতে নিষেধ করে বালুচরে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হচ্ছে। মাইকিং করেও লোকজনকে সচেতন করা হয়। কিন্তু কেউ বিধিনিষেধ মেনে চলেন না। দৈনিক এক লাখের বেশি পর্যটককে একসঙ্গে সামাল দিতে ২৫ জন লাইফগার্ড, ২৫ জন বিচ কর্মী ও ৭০-৮০ জন টুরিস্ট পুলিশের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সি-সেফ প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যমতে, স্রোতের টানে ভেসে কিংবা গুপ্তখালে আটকা পড়ে গত বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মারা গেছেন পাঁচজন পর্যটক। এর আগের ৬ বছরে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন ৪৯ জন পর্যটক।

কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকদের সতর্ক করতে টানানো হয়েছে লাল পতাকা। ছবি: সংগৃহীত 


নিরাপদ গোসলের জন্য সৈকতে সি-নেটিংয়ের ব্যবস্থার পক্ষে মতো দিয়েছেন পরিবেশবিষয়ক সংগঠনের কর্মীরা। পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, পর্যটকের প্রধান আকর্ষণ থাকে সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল এবং বিকেলে বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা। সৈকতকে ঘিরে গত দুই দশকে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে ছয় শতাধিক বহুতল ভবনের হোটেল রিসোর্ট গেস্টহাউসসহ নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু কেউ কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সমুদ্রের পানিতে সি নেটিং সিস্টেম গড়ে তুলে পর্যটকের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করতে কেউ আগ্রহী নয়। অরক্ষিত সৈকতে গোসলে নেমে কোনো পর্যটক মারা গেলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও নেই। লাশ ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতেও পর্যটকের পকেটের টাকা খরচ হয়। অথচ সৈকতের ছাতা-চেয়ারের (কিটকট), বিচ বাইক, ঘোড়া, দোকানপাটসহ নানা ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বাধীন বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হোটেল মালিক বলেন, পর্যটকের চাহিদা পূরণ করতে হেটেলমালিকেরা নিজেদের হোটেলে সুইমিংপুল তৈরি করেছেন। সমুদ্রের পানিতে সরকারি উদ্যোগে সি-নেটিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাইলে তাঁরা প্রস্তুত আছেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, হোটেলে আসা মাত্র পর্যটকের সমুদ্রের গোসলসহ নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয় মাথায় দিয়ে রাখা হয়। তারপরও অনেকে নির্দেশনা অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ সৈকতে গোসলে নেমে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাতে হোটেলমালিকেরাও বিব্রত।

জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এক যুগ আগে সৈকতে লাবণী পয়েন্টের একটি জায়গায় জাল দিয়ে ঘিরে পর্যটকের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। কয়েক মাসের মাথায় ঢেউয়ের ধাক্কায় তা বিলীন হয়। দুই বছর ধরে সমুদ্রের ভাঙনও তীব্র হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোথায় নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা দরকার।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.