জুরাইনে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা রেললাইন অবরোধ করেন। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ছবি: সংগৃহীত
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা সরে যাওয়ার পর আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে রিকশাচালকেরা ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে চলতে দেওয়ার দাবিতে রেললাইন অবরোধ করেন।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বেলা তিনটার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এবং পদ্মা সেতু হয়ে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র বলছে, বেলা ১১টার দিকে দুই শতাধিক রিকশাচালক জুরাইন রেলক্রসিং অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা রেললাইনের প্রতিবন্ধক নামিয়ে দেন। এতে আশপাশের সড়কগুলোয় যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ১টার দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তবে রিকশাচালকেরা রেললাইনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে রিকশাচালক ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে চালকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে চালকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে রেললাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রেল চলাচল শুরু হয়।
শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে এবং লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয়েছে। বেলা দেড়টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীর চারটি জায়গায় ছয়-সাত ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। দুপুরে মহাখালীতে রিকশাচালকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ওই এলাকার একাধিক ভবন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশ দেন। ওই দিন রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় আফসানা করিম নামের এক ছাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এর আগে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালালেও ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে পারেনি।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের প্রকৃত হিসাব সরকারের কোনো দপ্তরে নেই। তবে বিআরটিএ, যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ ও অন্যান্য অংশীজনের হিসাবে ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত তিন চাকার অবৈধ যানবাহন এখন ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আছে প্রায় ৫০ লাখ। আর ঢাকায় আছে ১০ লাখের মতো। কেউ কেউ মনে করেন, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত রিকশার সংখ্যা ১৫ লাখের কম হবে না।
তিন চাকার যানবাহনগুলোর কাঠামোগত ও যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, নানা ত্রুটিযুক্ত এসব যানের চলাচল নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এসব যানবাহনের সঙ্গে যে সংখ্যক মানুষ যুক্ত এবং যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে হুট করে বন্ধ করা যাবে না। তিনি মনে করেন, কারিগরিভাবে এগুলোর উন্নয়ন করা যেতে পারে। কোন কোন সড়কে, কী পরিমাণ চলতে দেওয়া হবে, তার একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকা দরকার।
বিষয় : ঢাকা অবরোধ রেলওয়ে ট্রেন চলাচল
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh