সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে নামা লোকজনের সঙ্গে ঢাকার মিরপুরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শতাধিক মানুষ স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান।
মিরপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহমেদ শামসুজ্জোহা বলেছেন, তাদের হাসপাতালে আসা শতাধিক মানুষের মধ্যে গুরুতর আহত অন্তত ২৫ জনকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার সময় এই হাসপাতালে গিয়ে সেখানে আহত কয়েকজনকে দেখা গেছে।
সাংবাদিকদেরকে ডা. শামসুজ্জোহা বলেন, দুপুর ১২টার পর আহত অনেকে আসতে থাকেন। তারা শর্টগানের গুলি, ছররা গুলি, রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন। ভিড়ের কারণে ৮২ জনের নাম লিস্টে তুলতে পেরেছি। আরও অন্তত ৭০ জনের তথ্য নিতে পারিনি। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
“২৫ জনের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সরকারি হাসপাতালে রেফার করেছি।”
তানজিদ নামে গুলিবিদ্ধ একজন সাংবাদিকদের বলেন, "দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে আমরা ১২ নম্বর থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বরের দিকে যাচ্ছিলাম। ওই দিকে থাকা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ওইদিক থেকে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের লোকজন অস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করে। আমার বাম পায়ে ছররা গুলি লেগেছে।"
সন্ধ্যা ৬টার দিকেও আন্দোলনকারীরা মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান করছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশের অবস্থান ছিল মিরপুর থানার সামনে। সেখান থেকে একটু পর পর গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত কয়েকজনকে নিয়ে দৌঁড়ে যেতে দেখা গেছে।তাদের একজনের মুখে গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে।
আগের মিরপুর থেকে গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে দেখা যায়।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার পর আন্দোলনকারীরা মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে মিরপুর-১০ এর দিকে এগোলে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
এরপর বেলা ১টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর ও আশপাশের এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
বেলা সাড়ে ৩টায় সেনা সদস্যদের দেখে শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১০ নম্বরের দিকে এগোতে থাকে। ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধলে তারা সেনা সদস্যদের পেছনে অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
১০ নম্বর গোলচত্বরে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু গাড়ি দেখা গেছে।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে মিরপুর-১২, মিরপুর-১৩ নম্বর ও কাজিপাড়ার দিকের সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছে।
তারা ‘ভুয়া ভুয়া’, খুনি সরকারের পতন চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকাটি ছেড়ে যায়।
মিরপুরের হোপের গলিতে গিয়ে দেখা যায়, পায়ে রাবার বুলেটে আহত একজন শিক্ষার্থী ফুটপাতে বসে আছেন। তাকে শুশ্রুষা করছেন তার সহপাঠীরা।
ঘটনাস্থল থেকে গণমাধ্যম কর্মীরা বলেছেন, মিরপুরের অরিজিনাল-১০ নম্বর থেকে আন্দোলনকারীরা ১০ নম্বর গোলচত্বরের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে মিরপুরের ইসিবি চত্বরে সড়ক অবরোধ করে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইসিবি চত্বরে অবস্থান নেন।
গাছের ডাল, টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর থেকে ইসিবি চত্বর হয়ে বনানী, বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কারও জরুরি প্রয়োজন হলে তাকে ছেড়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও অংশ নিয়েছেন আন্দোলনে। সেখানে ছাত্র হত্যার বিচার এবং সরকারের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন ঠেকাতে রোববার সকাল ১০টা থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh