ছবি—সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তেজনা আর নিরাপত্তা শঙ্কায় হল ছাড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনেক শিক্ষার্থীকে হয়রানি ও মারধর করেছে। এতে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিজয় একাত্তর হল, রোকেয়া হল, কবি জসীম উদ্দিন হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হলসহ প্রায় সব হল থেকেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই বেরিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাগ গুছিয়ে হল ছাড়তে দেখা গেছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের হলের গণরুমে আড়াইশোর মত শিক্ষার্থী থাকে। কিন্তু আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মাত্র ১০-১২ জন শিক্ষার্থী গণরুমে আছে। বাকিরা সবাই বাড়ি চলে গেছে।
“বাবা মা ফোন দিয়ে আমাদেরকে বাড়ি চলে যেতে বলছেন। তারা আমাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।নিজের ক্যাম্পাসে আমরা নিরাপদ নই।”
হল থেকে বের হয়ে যাওয়া রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেছেন নারী শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তার পরিবার খুবই উদ্বিগ্ন।
“ক্যাম্পাসে আমরা নিরাপদ নই। টোকাইদের দিয়ে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। বাসা থেকে বাবা-মা অনেক ফোন দিচ্ছেন। ওনারা চিন্তা করছেন, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে। তাই চলে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক হলে ফিরব।”
এদিকে সোমবার রাত ১০টার পর থেকে স্যার এ এফ রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হলসহ বেশ কয়েকটি হলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে হয়রানি, মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
স্যার এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “হলের ছয় জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। তিনজনকে হল থেকে বের করেও দেওয়া হয়েছে।”
ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন- ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাখাওয়াত হোসেন সাকু, লিমন খান রানা, মোর্শেদ ইসলাম। ”
এছাড়া বিভিন্ন হলের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে হলে কেউ ঢুকতে চাইলে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত কী না সে বিষয়ে হলের ফটকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এছাড়া তাদের ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট যাচাই করা হয়েছে। এবং কয়েকটি হলে মাইকিং করে কোটা আন্দোলনে অংশ না নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাইক নিয়ে প্রতিটি হলের মাঠে গিয়ে ‘কারো রাজনৈতিক চালের বলি’ না হওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় মাইকে বলতে শোনা যায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা, আপনারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। আপনারা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
সোমবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে এবং পরে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ছাত্রলীগ। পিটুনিতে আহত হয়ে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান, তাদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়।
সংঘর্ষ ও হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জোরালো অবস্থান নিতে দেখা যায়; রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
সন্ধ্যার কিছু আগে পুলিশ এসে হলগুলোতে অবস্থান নিলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ফিরতে থাকেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ক্যাম্পাসের মধ্যে দল বেঁধে অবস্থান নেন। রাতে বিভিন্ন হলে তাদের তৎপরতা বাড়তে দেখা যায়।
অপরদিকে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটি অংশ জোট বেঁধে শহীদ মিনারের দিকে রওনা দেয়। পরে তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের বাধায় বেশিদূর যেতে না পারে কার্জন হলের কাছে সড়কে আন্দোলনকারীরা হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবারের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকালে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা থাকলেও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নেমে পড়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টার পর আগে থেকেই ঢাকার উত্তরার আবদুল্লাহপুর, বাড্ডার প্রগতি সরণি, বনানী, রামপুরা, মুগদা, বিরুলিয়া, উত্তরার বিভিন্ন সড়ক, যাত্রাবাড়ী এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার অবরোধ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
যা নিয়ে আন্দোলন
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?
ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য নিয়ে রোববার রাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বিক্ষোভে নামেন। সেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছ, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh