ছবি: সংগৃহীত
সার্বজনীন
পেনশনে ‘প্রত্যয়’ স্কিমকে ‘বৈষ্যম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রহ্যারেরর
দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সশরীরে
এবং সান্ধ্যকালীন ক্নাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া মিডটার্ম, ফাইনাল, মৌখিক ও ভর্তি পরীক্ষাসহ
কোনো ধরনের পরীক্ষাই নেওয়া হচ্ছে না।
কর্মবিরতির
প্রথম দিনে সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে
শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে
অবস্থান নেন।
শিক্ষক
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাশরিক হাসান বলেন, ‘দাবি আদায় না
হওয়া পর্যন্ত আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলমান থাকবে। এ কর্মসূচির সঙ্গে নতুন কোনো কর্মসূচি
যুক্ত হবে কি না,
তা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষকেরা নতুন পেনশন কর্মসূচি
‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বেতন
স্কেলের দাবিতে রোববার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন
করেন। একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্ধ দিবস কর্মবিরতি
পালন করেন। বিকালে শিক্ষক সমিতি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর
সাতটি কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
কর্মসূচিগুলো
হলো-
১.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের
সকল বিভাগের/ইন্সটিউটের ক্লাস সমূহ বন্ধ থাকবে
২.
অনলাইন, সান্ধ্যকালীন, শুক্রবার ও শনিবারের প্রফেশনাল
কোর্সের ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম
বন্ধ থাকবে।
৩•
মিডটার্ম, ফাইনাল, মৌখিক ও ভর্তি পরীক্ষাসহ
কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।
৪•
বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ
থাকবে। অ্যাকাডেমিক কমিটি, পরিকল্পনা কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় ও অন্যান্য সভা
অনুষ্ঠিত হবে না।
৫•
ভর্তি পরীক্ষাসহ ডিন অফিসের সব
কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
৬•
কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত
হবে না।
৭•
দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক
কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না।
শিক্ষকদের
এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন
ডাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন।
বাংলা
বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিদুয়ান ইসলাম বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থচিন্তার পাশাপাশি আমাদের কথাও ভাবা উচিত
শিক্ষকদের। কোভিড মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে আমরা প্রায় এক
বছর পিছিয়ে গেছি। ২০২৩ সালে আমাদের
অনার্স শেষ হওয়ার কথা
ছিল, ২০২৪ এ এখন
আমরা চতুর্থ বর্ষে।’
‘এখন
শেষ বর্ষে এসে যদি আবার
আটকা পড়ি, তাহলে তো
চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ব। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির
প্রস্তুতি নিচ্ছে, দেশের বাইরে যাবে অনেকে। আন্দোলন
দীর্ঘ সময় ধরে চলতে
থাকলে সবাই তো পিছিয়ে
পড়বে প্রতিযোগিতামূলক জায়গাগুলো থেকে।’
অধিকাংশ
বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা
থাকলেও শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কারণে
পরীক্ষা যথাসময়ে হওয়া নিয়ে শঙ্কিত
গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চয়ন কৃষ্ণ দেব।
এই
শিক্ষার্থী বলেন, ‘১০ জুলাই থেকে
পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা
আমাদের। আমরা যাদের স্নাতক
চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে প্রতিযোগিতামূলক
চাকরির বাজারে ঢোকার পরিকল্পনা করছি তাদের স্বপ্ন
স্বপ্নই রয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
দাপ্তরিক কাজ স্বাভাবিকভাবেই দেরি
হয়, এখন আরো দেরি
হবে। সব থেকে বড়
যেই বিষয়ে শিক্ষকগণ বেতনভাতা সব সুযোগ সুবিধা
নিয়ে এরপর তাদের নির্ধারিত
কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন।
আমরা শিক্ষার্থীরা তো কোনো অন্যায়
করিনি, তবে আমাদের কেন শাস্তি দেওয়া
হচ্ছে।’
আন্দোলনের
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার দিকটাও নজরে আনতে শিক্ষকদের
প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
৩
জুলাই থেকে অর্থনীতি বিভাগের
প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা।
এখন পরীক্ষা হবে কি না
তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী
অপূর্ব কর্মকার বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার বলেছেন, দাবি আদায় হলে
পরীক্ষা হবে, নয়তো হবে
না। এটা কেমন কথা? বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের শুরুতেই এমন খারাপ অভিজ্ঞতার
সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
এ
বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাশরিক হাসান বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে
ইতোমধ্যে তারা একটি মিটিং
করেছেন।
‘আমরা
সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দাবি আদায় হয়ে
গেলে অতিরিক্ত ক্লাস, অনলাইন ক্লাস নিয়ে ক্ষতিটা পূরণ
করব।'
গত
মার্চ মাসে সর্বজনীন পেনশন
স্কিমে আগের চারটি স্কিমের
সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু
করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অন্তর্ভুক্ত
থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত,
স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা
এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪
সালের ১ জুলাই পরবর্তী
সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা
বা কর্মচারীরা।
শিক্ষক
সমিতির অভিযোগ, এ স্কিম ‘বৈষম্যমূলক’। এতে আগামী
১ জুলাই এবং এর পরে
নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কিন্তু
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল না হওয়ায় রোববার
সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা আসে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh