ছবি: সংগৃহীত
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অস্থিরতা কাটছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। একদিকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে বেশ তৎপর ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। অন্যদিকে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে সোচ্চার বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে সিদ্ধান্ত গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
সোমবার এক রিটের প্রেক্ষিতে আদালতের রায় যায় ছাত্রলীগের পক্ষে। রায় অনুযায়ী বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে কোনো বাধা নেই। এরপর সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের পাশে থাকার আর্জি জানিয়ে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে আদালতের রায়ের প্রতি নিজের সম্মানের কথাও জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের হাতে আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে উঠেছিল বুয়েট।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাতিল করা হয় ছাত্ররাজনীতি। কিন্তু গত ২৮শে মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বুয়েটে প্রবেশ করে। এরপর ফুঁসে ওঠেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বুয়েট শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বিসহ অন্যদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে জমায়েতসহ ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন। পরীক্ষায় দুইজন ছাড়া কেউই অংশ নেননি। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইমতিয়াজ হোসেনের হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল করে প্রশাসন। গত রোববার আন্দোলন চলা অবস্থায় বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফেরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। এরপর শোডাউন দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সংগঠনটি।
গতকাল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে হাইকোর্ট। এ আদেশের ফলে দেশের শীর্ষ এ প্রকৌশল উচ্চশিক্ষালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা থাকলো না। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে সোমবার উচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন ইমতিয়াজ রাব্বি। রিটে বুয়েট কর্তৃপক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধ করে যে নোটিশ দিয়েছিল, তা স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে বুয়েটের তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। তখন তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক রাজনীতিরও সুযোগ নেই।
গতকালকের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বুয়েটের শহীদ মিনারসংলগ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ছাত্রলীগমনা একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা জয় বাংলা স্লোগানও দেন। গতকালও ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেননি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রায়ের পর বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। লিখিত বক্তব্যে তারা ভিসিসহ শিক্ষকদের পাশে থাকার আর্জি জানান। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও গত ২৮শে মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩ টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, অনেক প্রতিষ্ঠানেইতো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের উপর। এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন।
তারা বলেন, আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখবো যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে যা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না।
তারা বলেন, এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সকল শিক্ষকের কাছে আর্জি জানাচ্ছি তারা যাতে এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। আমরা আমাদের ভিসি স্যারের উপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিনদিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি- তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।
আদালতের রায়ের পর বুয়েট ভিসি ক্যাম্পাসে নিজ কার্যালয়ে প্রফেসর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমরা আদালত অবমাননা করতে পারবো না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh