× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ধর্ষণকাণ্ড ও বিক্ষোভে উত্তাল জাবি, তদন্ত কমিটি গঠন

জাবি প্রতিনিধি

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৭ পিএম । আপডেটঃ ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলের রুমে আটকে রেখে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু করেন তারা। এ ছাড়া জড়িতদের শাস্তি চেয়ে গতকাল রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সনদ স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এদিকে ধর্ষণকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা পরিষদ এবং আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক)। 

এর আগে গত শনিবার রাত ১০টার দিকে ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানেই তারা সমাবেশ করেন এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

গতকালের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা, তিন দিনের মধ্যে হলগুলোতে অবস্থানরত অছাত্রদের বের করা এবং এ ঘটনায় প্রক্টর, প্রভোস্টের ভূমিকা স্পস্টকরণ করা। 

ধর্ষণের এ ঘটনায় বিচার দাবি করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও। গতকাল দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মিছিল নিয়ে শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে গিয়ে মানববন্ধন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে মশাল মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে শনিবার জাবির আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও বহিরাগত এক যুবকের বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ধর্ষণের এ ঘটনায় শনিবার রাতেই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়ে কথা বলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী। এ সময় মামলায় উল্লিখিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্বপরিচিত মামুনুর রশিদ একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন। গত শনিবার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে তার পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন। পরে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভুক্তভোগীর স্বামী ক্যাম্পাসে এলে হলের একটি কক্ষে মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন। একপর্যায়ে মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জানান, সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে তারা কিছু টাকা পাবেন। কিন্তু দোকানদার টাকা দিতে চাচ্ছেন না। তাই ওই দোকান থেকে পাওনা টাকার বিনিময়ে ভুক্তভোগীর স্বামীকে টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাব নিয়ে সমপরিমাণ টাকা মামুনকে দিতে বলেন।

এরপর তারা ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুনের কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার জন্য স্ত্রীকে বলতে বলেন। কারণ হিসেবে বলেন, মামুন কিছুদিন ক্যাম্পাসে থাকবেন। স্বামী তার স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। রাত ৯টার দিকে ওই নারী ক্যাম্পাসে আসেন। ভুক্তভোগীর স্বামী, মামুন, মুস্তাফিজ ও মুরাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন। একপর্যায়ে মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে ফেলেন ও মারধর করেন। পরে মুস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই নারী ও তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী প্রথমে আশুলিয়া থানায় এবং পরে সাভার মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহিল কাফী জানান, এ ঘটনায় সাভার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে। তিনি বলেন, আসামিদের পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তা করার অভিযোগে তিনজনকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করা হয়। সাভার থানা এলাকা থেকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। আজ (রবিবার) সকালে মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পলাতক আসামি মুরাদ ও মামুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম এ আদেশ দেন। এদিন চারজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। অপর দিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদন বাতিল ও জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত প্রত্যেক আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মোস্তাফিজুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। অন্যরা একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ।

এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসানুজ্জামানের সিন্ডিকেটের তারিখ থেকে সনদ স্থগিত এবং ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।  মুরাদ হোসেন, সাব্বির হোসেন সাগর ও এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার, সনদ স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং শাহ পরাণের সনদ স্থগিত করা হয়।

এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, অধ্যাপক ড. ছায়েদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) মাহতাব-উজ-জাহিদ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অছাত্রদের আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে অনুমোদনহীন রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।’ গঠিত কমিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে বলেও জানান তিনি।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ এ ছাড়া সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ মোস্তাফিজকে সাময়িক বহিষ্কার এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে।

ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে মশাল মিছিল

ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের পাদদেশ থেকে একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি মীর মশাররফ হোসেন হল, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও ছাত্রী হলগুলো হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। 

বিভিন্ন সংগঠনের উদ্বেগ

জাবিতে স্বামীকে আবাসিক হলে আটক রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা পরিষদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানায় সংগঠন তিনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাবিতে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কমিশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র স্থানে এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বারবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অভিযুক্তকে দ্রুতসময়ে গ্রেপ্তার করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানাই।’

মহিলা পরিষদ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। পাশাপাশি আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.