দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা।
ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, "ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট সংগ্রহ হয়েছে।" তিনি নির্বাচনের স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, "কার্জন হলে ভুলক্রমে একটি ছোট সমস্যা হয়েছিল। এর জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং পরবর্তীতে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।" উল্লেখ্য, কার্জন হলে এক ভোটারকে দুটি ব্যালট দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে ওই পোলিং অফিসারকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।
প্রার্থীদের নানা অভিযোগ
ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা নানা অভিযোগ তুলেছেন।
ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন যে, ডাকসুতে অংশ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করা হয়েছে। তিনি বলেন, "গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণ করার নতুন খেলার অপচেষ্টা চলছে।"
ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, "নির্বাচনে বেশ কয়েকটি ব্যত্যয় হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।"
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী খায়রুল হাসান অভিযোগ করেন যে, ভোটকেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেন অভিযোগ করেন যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু গণমাধ্যমে 'ট্যাগিং' ও 'প্রোপাগান্ডার' মাধ্যমে তার ভোট কমানোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে টিএসসির ভোটকেন্দ্রে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক প্রার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা অভিযোগ করেন যে, এক ভোটারের ব্যালটে আগে থেকেই ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল। পরে ওই ব্যালট বদলে দেওয়া হয়। পোলিং কর্মকর্তা অবশ্য এটিকে ভুল বলে দাবি করেছেন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ, দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের মৃত্যু
ভোটগ্রহণের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমের একাধিক সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তরিকুল ইসলাম নামের এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। টিএসসি এলাকায় একটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষও স্থাপন করা হয়।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৫৯ এবং ছাত্রের সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন। ডাকসুতে মোট ২৮টি পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী এবং হল সংসদে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদের জন্য ১০৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।