× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রুয়া নির্বাচনে জামায়াতের চমক: বিএনপিতে বিভক্তি, আওয়ামী লীগের কৌশল ব্যর্থ

আরিফ খান

২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:২৮ এএম । আপডেটঃ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:১৬ এএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া)-এর কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত তিনটি গ্রুপ অংশগ্রহণ না করায় একচেটিয়া জয় পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গত ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে জামায়াত এককভাবে বিজয় লাভ করলে ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল নিয়ে সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব মহলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট-নির্ভর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির চেষ্টা করলেও জামায়াত কৌশলগতভাবে তাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। নির্বাচনের আগে তারা নিয়ম মেনে বিপুল সংখ্যক সদস্য যুক্ত করে নিজেদের জয়ের পথ প্রশস্ত করে নেয়।

ভোটের বিস্তারিত ও ফলাফল

গত ২৬ জুলাই শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে রুয়ার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম ও নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ২৭টি পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. রফিকুল ইসলাম খান এবং সাধারণ সম্পাদক হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. মো. নিজাম উদ্দীন। নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ৪৯টি পদে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। জামায়াতের প্রার্থীরা গড়ে প্রায় ৩৫০০ ভোট পেলেও বিএনপি সমর্থিতরা পায় মাত্র ২০০-এর মতো ভোট।

সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কৌশলগত জয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া) সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ১৩০০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ভেঙে দিয়ে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের নেতৃত্বে নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত ১০ মে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে এবং নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দেয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে সদস্য সংখ্যা ১৩০০ থেকে বেড়ে ৭৮০০-তে পৌঁছায়। এতে জামায়াতের ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার, যাদের একটি বড় অংশ ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি ও ইসলামের ইতিহাসের প্রাক্তন ছাত্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদস্যের মতে, ভোটার হওয়ার শেষ ৪ দিনে জামায়াত-শিবির প্রত্যেক নতুন সদস্যের জন্য ৫ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা রুয়ার তহবিলে জমা দেয়। এতে নির্বাচনের আগেই জামায়াতের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

বিএনপির বিভক্তি ও আওয়ামী লীগের ব্যর্থ কৌশল

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি পন্থীরা আওয়ামী লীগ ও বামদের সংরক্ষিত প্রায় ১ হাজার ভোটের ওপর নির্ভর করে একটি প্যানেল গঠনের চেষ্টা করে। তাদের অভিযোগ ছিল, নতুন সদস্যদের ভোট দেওয়ার সুযোগ এক মাস পর দেওয়া হোক। এই জটিল পরিস্থিতিতে বিএনপির চারটি গ্রুপ নিজেদের মধ্যে বিভিক্ত হয়ে পড়ে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হুমকি দিতে শুরু করে। এমনকি রেজিস্ট্রারের বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

একদিকে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত সাবেক শিবির নেতারা সব পদে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেন এম আমিনুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আইয়ুব আলী খান। কিন্তু বিএনপির তিনটি গ্রুপ ভোট বর্জন করলে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব নতুন অ্যাডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেন।

পরে নতুন কমিশন এক মাস সময় দিয়ে আবারও সবাইকে সদস্য হওয়ার সুযোগ দেয়। এই সুযোগে আরও ৫০০-এর বেশি ভোটার বাড়ে, যাদের অধিকাংশই ছিল জামায়াত সমর্থিত। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী ও বিএনপি পক্ষ হিসাব করে দেখে, তাদের সম্মিলিত ভোটের চেয়ে জামায়াতের ভোট সংখ্যা অনেক বেশি। তখন এই সিন্ডিকেট নির্বাচন বাতিল করে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের সেই কৌশল ব্যর্থ হয়।

প্রতিক্রিয়া

রুয়া'র তৎকালীন অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক প্রো-ভিসি ফরিদ আহমেদ বলেন, "বিএনপির একটি বড় অংশ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় এটি অনেকটাই একদলীয় নির্বাচন হয়েছে। তবে সবার সিদ্ধান্তক্রমে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং জামায়াত জয়লাভ করেছে।"

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী কামরুজ্জামান কোরবান ন্যাশনাল ট্রিবিউনকে বলেন, "এ নির্বাচনে বিএনপির কৌশলগতভাবে এগিয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু একটি অংশ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ, পতিত জাসদ ও কমিউনিস্টদের নিয়ে আলাদা প্যানেল করতে চাওয়ায় জামায়াত আমাদের সঙ্গে ঐক্য করতে অস্বীকার করে। জামায়াত এই মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে নিয়ম মেনে সদস্য বাড়িয়ে নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছে।"

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.