× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:০২ পিএম । আপডেটঃ ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ আশ্বাসে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

সোমবার ৯টা ৩৬ মিনিটে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যের’ নেতা ও অনশনরত শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম।

গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা অনশন প্রত্যাহার করছি।”

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নায়েক নূর এ সময় বলেন, “আমরা আন্দোলন সাত দিনের জন্য স্থগিত করছি। মন্ত্রণালয় যেসব আশ্বাস দিয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকর অগ্রগতি না দেখলে আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।”

এরপর শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেলক্রসিং ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দেন। মহাখালী রেলক্রসিং থেকে জাহাঙ্গীর গেইটগামী সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ছয় ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরুর পরিস্থিতি হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কোনো সুস্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়নি।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মণ্ডল।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন।

এই সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে সরকার। তবে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা চাইছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়া হোক।

ওই দাবিসহ সাত দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছিলেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। পরদিন বিকাল থেকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন তাদের কয়েকজন।

আর বৃহস্পতিবার থেকে বিরতি দিয়ে চলছিল সড়ক অবরোধ কর্মসূচি, যাকে তারা বলছেন, ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’।

আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।

এসব দাবিদাওয়া নিয়ে সোমবারও সড়ক অবরোধের পর মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে দিনভর সড়কে যানজটের পাশাপাশি ট্রেন বন্ধে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ক্ষোভে পরে যাত্রীরা কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজারকে অবরুদ্ধ করেন।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাতে কলেজটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পরে রাত সোয়া ৯টায় কর্মকর্তারা মহাখালী রেলক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান।


সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস

মহাখালী রেলক্রসিংয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান বলেন, “অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সহানুভূতিশীল। তোমরা কলেজের সম্মান বাড়াতে যে কষ্টটা করছ এর প্রতিদান নিশ্চয়ই তোমরা পাবে। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুইজন এসেছি। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

“সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, বিশেষ করে ঢাকার। তোমরা রাস্তায় আছ, তোমাদের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তা জানানোর জন্য আমরা এসেছি।”

কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলেও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন যুগ্মসচিব মো. নরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কোন কাঠামোতে হবে তা আলোচনা করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা দ্রুত ওই সিদ্ধান্ত জানাব। জমি বরাদ্দ, নতুন বিল্ডিং ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল। কলেজের পাশে টিএনটি ও রাজউকের জমি আছে। সেগুলো যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিতুমীরকে দিতে পারলে সেখানে আবাসন সংকট মেটানো সম্ভব। আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসনে কার্যক্রম গ্রহণ করে আগামী সাত দিনের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি জানাব। শিক্ষা মান বাড়াতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর দাবির বিষয়ে আমরা ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করব।”

তিতুমীর কলেজের আইন ও সাংবাদিকতা বিভাগ চালুর দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা ক্যাডারে এ সাবজেক্ট নাই। এ দাবিটি আরও পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”

শিক্ষক সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়ে নুরুজ্জামান বলেন, “আমরা আগামী সাত দিনের মধ্যে কলেজের পিএইচডি ডিগ্রিধারী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করব। ১৫২ জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ছিল। এটি আরও ত্বরান্বিত করতে আমরা উদ্যোগ নেব।

“তাদের আবাসনের ক্রাইসিস ও শিক্ষা মান বৃদ্ধির জন্য প্রিন্সিপাল মহোদয়ের নেতৃত্বে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে একটি টিম গঠন করা হবে। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে আমাদের জানাবেন।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যুগ্মসচিব আরও বলেন, “সেমিস্টার সিস্টেমে পড়াশোনার কথা তোমরা বলছ। সেটি যদি সম্ভব হয়, আমরা পর্যালোচনা করব। ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছে তাদের কাছে আমরা এ প্রস্তাব রাখব। আমরা আশা করি সবাই মিলে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব।”

এরপর আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নায়েক নূর বলেন, “মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু সেটি ঘোষণা করা হলে অন্যান্য কলেজগুলো একই দাবি জানবে, পরিস্থিতি সামলানো যাবে না। তাই এ মুহূর্তে তারা সে ঘোষণা দিচ্ছেন না।”

পরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: nationaltribune24@gmail.com

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.