ফাইল ছবি
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে এবার বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকে হোচট খেলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ইউসিবির সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
গতকাল শনিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একিভূতকরণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, একীভূতরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গত ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডেকে জানায় আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা একীভূত হওয়ার বিষয়ে এমওইউ সই করেছে। এছাড়া সিটির সঙ্গে বেসিক, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল, সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত করা হবে। যদিও এর আগে গভর্নর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ৮ থেকে ১০টি ব্যাংক একীভূত করা হবে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগে থেকে কোনো ধরনের আলোচনা না করে হঠাৎ গত ৯ এপ্রিল ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। তবে চাপিয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হয়নি। ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঋণ আদায় জোরদার করবে। বিশেষ করে শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায়ে ক্রাশ কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্থরে ঋণ আদায়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হবে।
আর্থিক খাতের দুরাবস্থা কাটাতে কয়েক ব্যাংক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের জন্য দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক জারি করে। এর আলোকে একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধন পরিস্থিতি, ব্যবস্থাপনা ও তারল্য পরিস্থিতি এই ৪টি সূচকের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধের চূড়ান্ত পর্যায়ে দূর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে মার্চ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এক করার কথা। এরপর গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক কিভাবে একীভূতকরণ করা হবে সে বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা অনুসরণ না করে কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবে চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে ব্যাংক খাতে অশ্বস্তি শুরু হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পরিচালক বলেন, ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে সিকদার পরিবারের বিতর্কিত পরিচালকদের সরিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। ব্যবস্থাপনায়ও পরিববর্তন এসেছে। এখন হঠাৎ করে যদি বলা হয় আরেক ব্যাংকের সঙ্গে এক হয়ে যেতে। যে কারণে একীভূত না হয়ে ব্যাংকটিকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ব্যাংকের যে সম্পদ রয়েছে অনেক ব্যাংকের চেয়ে ভালো। সুতরাং খেলাপি ঋণ কমানো গেলে এবং আস্থা ফেরানো গেলে ব্যাংকটি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন পারভীন হক সিকদার এমপি রোববার বলেন, অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা কখনও তারা নেননি। একীভূত হওয়ার ইস্যুতে পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ জানেনও না।
তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪১ বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে নতুনভাবে গঠন করে দিয়েছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে এই ব্যাংক আবার দেশের এক নম্বর ব্যাংকে পরিণত হবে।
বিষয় : ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূতরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh