ছবি: সংগৃহীত
মাটি, বাঁশ, বেত কিংবা হোগলাপাতার মতো কাঁচামাল দিয়ে সহজেই বিভিন্ন ধরনের হস্ত ও কারুপণ্য বানানো যায়। এ কারণে শহর-গ্রামনির্বিশেষে অকৃষি খাতে আয় বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই শিল্প।
অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব হওয়ায় হস্ত ও কারুপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তবে পুঁজি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এবং মানসম্মত পণ্য কম থাকায় সম্ভাবনাময় এ খাতে এগোতে পারছেন না দেশীয় উদ্যোক্তারা।
কয়েক বছর ধরেই হস্তশিল্প পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ খাত নিয়ে আলাদা নীতিমালাও হয়েছে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যকরণের চাপ বাড়বে।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ জানুয়ারি হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছেন। রপ্তানি নীতি অনুযায়ী, পণ্যভিত্তিক রপ্তানি উৎসাহিত করতে প্রতিবছর একটি পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করে সরকার।
হস্তশিল্পের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ পরিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী নতুন ও মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করা। এই খাতের রপ্তানি বাজার বাড়াতে হলে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাঁদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্ভাবনা থাকলেও হস্ত ও কারুশিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ পুঁজির অভাব। এ ছাড়া মানসম্মত পণ্যের অভাব, বিপণনে সীমাবদ্ধতা, কাঁচামাল ও সরবরাহের সংকট, কাঁচামালের মূল্য ও মজুরি বৃদ্ধির মতো আরও কিছু বিষয় এই খাতের প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে আছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২২ সালে হস্ত ও কারুশিল্প নিয়ে একটি জরিপ করে। তাতে দেখা গেছে, দেশে হস্ত ও কারুশিল্পের বাজার ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার ওপরে। প্রতিবছর এই বাজার বাড়ছে। তবে একই হারে বাড়ছে না রপ্তানি। বাজার বিশ্লেষক ওয়েবসাইট আইএমএআরসির তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে হস্তশিল্পের বৈশ্বিক বাজার ছিল প্রায় ৮৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের।
এই খাতে বছরে ৯ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি রয়েছে। সে অনুযায়ী ২০৩২ সাল নাগাদ এই বাজার ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের সামনে এখন বিশাল এই বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এদিকে হস্তশিল্প পণ্যের রপ্তানি নিয়ে সরকারি সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও ব্যবসায়ীদের তথ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩ কোটি ডলারের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। অন্যদিকে রপ্তানির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি বলে দাবি বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বা বাংলাক্রাফটের।
এ বিষয়ে বাংলাক্রাফটের সভাপতি এস ইউ হায়দার বলেন, গত দুই বছরে কাঁচামালের মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, মজুরি বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি; সরবরাহ খরচও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এমনিতেই আমরা চাপে রয়েছি। আমরা নগদ সহায়তা ২০ শতাংশে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। নগদ সহায়তা পুরো বন্ধ করলে তা এ খাতের জন্য বড় চাপ তৈরি করবে। ফলে যে উদ্দেশ্যে হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন আরও দীর্ঘায়িত হবে।
বিষয় : হস্তশিল্প পুঁজির অভাব
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh