× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আইএমএফের ঋণ: শর্ত পূরণে সফলতা, তবে রাজস্বে ব্যর্থ বাংলাদেশ

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪০ পিএম । আপডেটঃ ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১৬ পিএম

আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের জন্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখা এবং জ্বালানি ও সার আমদানি বাবদ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া বিল কমানো—এই দুটি কঠিন শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে, প্রতিবারের মতো এবারও রাজস্ব (কর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

আইএমএফের একটি মিশন আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা মূলত গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে এবং ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

আইএমএফ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছিল। এ বছরের জুনে সেই ঋণের মেয়াদ ছয় মাস এবং পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাড়ানো হয়। এর ফলে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার।

প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের ষষ্ঠ কিস্তি পেতে হলে বাংলাদেশকে মোট ছয়টি বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে তিনটি শর্ত মে মাসেই দেওয়া হয়েছিল।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুনে আইএমএফের নির্ধারিত ১৭.৪ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০.৭৩ বিলিয়ন ডলারে। সেপ্টেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা ১৮.৬৫ বিলিয়ন ডলার থাকলেও অর্জন হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

আগের সরকারের সময়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে গিয়ে বারবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। তবে, গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায় এবং ডিসেম্বর ও মার্চের রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়।

এই উন্নতির প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়াকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, "অর্থপাচার বন্ধ হওয়ায় আরও বেশি রেমিট্যান্স এখন সরকারি চ্যানেলে আসছে। আমদানি কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে কোনো চাপ নেই।"

গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে।


জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধ সংক্রান্ত দুটি কঠিন শর্তও পূরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

বৈদেশিক পাওনা: জুনের মধ্যে ৮৭০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত ছিল, যা নামানো হয়েছে ৩১৪ মিলিয়ন ডলারে।

দেশীয় পাওনা: ২৮ হাজার ৭০ কোটি টাকার নিচে রাখার শর্ত ছিল, যা কমানো হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকায়।


অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, গত সপ্তাহে সরকার আদানি ও শেভরনসহ জ্বালানি খাতের পাওনাদারদের ৫ বিলিয়ন ডলার এবং সার আমদানি বিলের ২০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা

রিজার্ভ ও বকেয়া পরিশোধে অগ্রগতি হলেও, আইএমএফের দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকায়, আইএমএফ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই ব্যর্থতার জন্য এনবিআরকে পৃথক করা, গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ এবং এনবিআর কর্মীদের আন্দোলনকে দায়ী করেছেন।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "গণঅভ্যুত্থানের কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে কর আদায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীকালে এনবিআরে বিক্ষোভ ও আমদানি কমে যাওয়াতেও রাজস্ব কমেছে।" তিনি মনে করেন, যেহেতু রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, তাই বাংলাদেশকে এখন আইএমএফের কাছে এ বিষয়ে ছাড় চাইতে হবে।

আইএমএফ মিশনের পর্যালোচনা

আগামী ২৯ অক্টোবর আইএমএফ মিশন ঢাকায় এসে জুন পর্যন্ত প্রায় ১৮টি শর্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী যে, বাংলাদেশ বেশিরভাগ শর্তই পূরণ করেছে।

তবে, ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, আইএমএফ দুটি বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করতে পারে। একটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা এবং অপরটি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি সার্কুলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে বর্তমানে ডলার কিনছে। এর ফলে আইএমএফ বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, সরকার এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করলেও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে সাম্প্রতিক সার্কুলারের মাধ্যমে "অতীতের কিছু খারাপ অভ্যাস ফিরে আসতে পারে।"

বিষয় : আইএমএফ

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.