× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইসলামী ব্যাংকে 'শুদ্ধি অভিযান': ২০০ ছাঁটাই, ৪৯৭১ কর্মী ওএসডি

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪৭ এএম । আপডেটঃ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০৭ এএম

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)

দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে (আইবিবিএল) শুরু হয়েছে নজিরবিহীন এক 'শুদ্ধি অভিযান'। চাকরিবিধি ভঙ্গ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসঙ্গে ২০০ কর্মীকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মীকে তাৎক্ষণিকভাবে ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) বা বিশেষ দায়িত্বে রাখা হয়েছে। ওএসডি হওয়া কর্মীরা বেতন-ভাতা পেলেও তারা কোনো দায়িত্ব পালন বা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে পুরো ব্যাংকজুড়ে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই অনিয়মের শুরু। সে সময় নিয়ম ভেঙে ও পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি বায়োডাটা বা সিভি (CV) নিয়ে হাজার হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের একটি বড় অংশই দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্য থেকে। এর ফলস্বরূপ, বর্তমানে ব্যাংকটির প্রায় অর্ধেক কর্মীই ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ।

ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এস আলম গ্রুপের আমলে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা ব্যাংকের স্বার্থেই সবাইকে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার আওতায় এনেছি।"

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই বিশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বলা হলেও মাত্র ৪১৪ জন এতে অংশ নেন। যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বর্তমানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি, সেই ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মীকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়াও, যারা এই পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, তাদের মধ্য থেকে ২০০ জনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তবে, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রায় এক মাস আগে তাদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নিয়মিত পদোন্নতিমূলক পরীক্ষা (প্রমোশনাল এক্সাম) চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই আদেশ অমান্য করে নতুন করে এই বিশেষ পরীক্ষা নিয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আবারও আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, "ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে কর্মীদের মান যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভা নেওয়া হয়, কিন্তু কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সরাসরি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নতুন অভিজ্ঞতা।"

তিনি আরও বলেন, "ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই কর্মী নিয়োগ বা তাদের যোগ্যতা যাচাই সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত, তবে অবশ্যই তা দেশের প্রচলিত আইন ও নীতিমালার মধ্যে থেকেই করতে হবে।"

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নানা কৌশলে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়, যার ফলে ব্যাংকটি গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই ব্যাংকের নাজুক আর্থিক অবস্থা থেকে মুক্তি এবং অযোগ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বাছাই করার জন্য এই বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন এক নজির সৃষ্টি করল, যেখানে কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সরাসরি পরীক্ষা নিয়ে চাকরি বহাল রাখার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকটির এই পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করছে আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর। যদি এই বিশেষ পরীক্ষা ও ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলমান থাকে, তবে হাজার হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.