ফাইল ছবি
জাতীয় মাছ ইলিশের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটই এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। মাছ ধরতে কেজিপ্রতি গড় খরচ সর্বোচ্চ ৮৪৬ টাকা হলেও, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৩০০০ টাকা দরে।
'ইলিশ মাছের বাজারমূল্য সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদন' অনুসারে, ইলিশের দামে লাগামহীন বৃদ্ধির প্রধান ক্ষেত্র হলো লম্বা সাপ্লাইচেইন এবং প্রতিটি স্তরে অস্বাভাবিক মুনাফা।
হাতবদল: সাধারণভাবে ইলিশ মাছ ৪ থেকে ৬টি স্তরে হাতবদল হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়।
অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি: প্রতিটি স্তরেই দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
ইলিশের সাপ্লাইচেইন:
১. জেলে
২. মাছঘাট (দাদন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণ)
৩. আড়তদার
৪. হোলসেল পাইকার
৫. খুচরা বিক্রেতা/দোকানদার
৬. ভোক্তা
সমীক্ষায় দেখা যায়, ইলিশ আহরণে নৌকার আকারভেদে প্রতিকেজি মাছ ধরতে জেলেদের গড় খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হয়ে সেই দাম অনেক বেড়ে যায়।
নৌকার আকার | ইলিশ আহরণে গড় ব্যয় (কেজিপ্রতি) | চূড়ান্ত মোট খরচ (উৎপাদক মুনাফাসহ) |
ছোট নৌকা | ৪৮৩.৮৭ টাকা | ৮১৩.১০ টাকা |
মাঝারি নৌকা | ৫০৪.০৩ টাকা | ৮৪৬.৭৩ টাকা |
বড় নৌকা/ট্রলার | ৪৭১.৬৯ টাকা | ৮২৮.০৪ টাকা |
অথচ, বর্তমানে বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা বা তারও বেশি দামে।
বিটিটিসি রিপোর্টে ইলিশের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ১১টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:
১. দাদন: দাদন ব্যবসায়ীরা সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় দামের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় না।
২. মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেট: একাধিক স্তরে অস্বাভাবিক মুনাফা ও কৃত্রিম সংকট তৈরি।
৩. চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা: ইলিশের সরবরাহ কম থাকা (২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত নদীতে সরবরাহ দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে)।
৪. রপ্তানি: রপ্তানির পরিমাণ খুব বেশি না হলেও, রপ্তানিমূল্য স্থানীয় বাজারমূল্যের অর্ধেক হওয়ায় মুনাফা বেশি হচ্ছে।
৫. জ্বালানি তেল ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি।
৬. মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি।
৭. নদীর নাব্যতা সংকট ও পরিবেশগত কারণ।
৮. অবৈধ জালের ব্যবহার।
৯. বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকা।
১০. নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা।
১১. মজুদ ও সিন্ডিকেট।
ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশকে ফিরিয়ে আনতে এবং জেলেদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রতিবেদনে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান সুপারিশগুলো হলো:
সাপ্লাইচেইনের ধাপ কমানো:
বাজার নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা:
জেলেদের সুরক্ষা:
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে ইলিশের দামে স্বচ্ছতা আসবে এবং ভোক্তা ও জেলে উভয় পক্ষই উপকৃত হবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh