× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়ায়, বলছেন গ্রামীণফোন কর্মকর্তা

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৩ পিএম । আপডেটঃ ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৫ পিএম

তানভীর মোহাম্মদ। ছবি: গ্রামীণফোনের সৌজন্যে

বাজার হিসেবে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও ঝুঁকি রয়েছে। বিনিয়োগের আগে সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকির বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেয় বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন। স্থায়ী নীতি, কর ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামোর বিষয়গুলো যদি অনুমানযোগ্য হয়, তাহলে এ দেশে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

এ কথা বলেছেন দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ। সম্প্রতি গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি গ্রামীণফোনের অবস্থান ও উদ্যোগ, বিনিয়োগ পরিবেশ, ফাইভ-জি প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।


তানভীর মোহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর বছর এখানে নীতির পরিবর্তন হয়। বিনিয়োগকারীরা এই সম্ভাবনা দেখে এখানে আগ্রহী হয়। কিন্তু যখন তারা দেখে আজকে যে নীতির আওতায় বিনিয়োগ হয়েছে, পরের বছরে তা পরিবর্তন হয়ে গেছে, তখন বিনিয়োগকারীর হিসাব-নিকাশই এদিক-সেদিক হয়ে যায়। তাই বিনিয়োগকারীরা বাজার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি দুটোই দেখে। বাংলাদেশে ঝুঁকির বিষয়টি বেশি। এটা কমিয়ে আনা গেলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’

বাংলাদেশে তিনটি মোবাইল অপারেটর একই ধরনের লাইসেন্স নিয়ে মোটামুটি একই সময়ে একই স্পেকট্রামে যাত্রা শুরু করেছিল। তবে শীর্ষে চলে আসে গ্রামীণফোন। নিজেদের সাফল্যের বিষয়ে তানভীর মোহাম্মদ বলেন, কোনো অপারেটরকে গ্রাহকের পছন্দের হতে হলে তাদের সেবা পাওয়ার সুযোগ, পছন্দসই সেবা পাওয়া এবং সেই সেবা গ্রাহকের সামর্থ্যের মধ্যে হতে হবে। গ্রাহককে এর সবকিছু দিয়েই ১ নম্বর অপারেটরে পরিণত হয়েছে গ্রামীণফোন। এমনকি লাভজনক প্রতিষ্ঠানেও পরিণত হয়েছে।

গ্রামীণফোন চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত সরকারকে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। আর কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত এ দেশে বিনিয়োগ করেছে ৫২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। গ্রামীণফোন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের একটি ভালো উদাহরণ বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানের এই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।

নরওয়ের টেলিযোগাযোগ কোম্পানি টেলিনর গ্রামীণফোনের অন্যতম বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী। গ্রামীণফোন বাংলাদেশে থাকতে এসেছে উল্লেখ করে তানভীর মোহাম্মদ জানান, কিছু কিছু জায়গা, যেমন ট্রান্সমিশন ও নীতির দিক থেকে অনুকূল পরিবেশ পেলে আরও বেশি বিনিয়োগ আসবে।


ফাইভ-জি সেবা নিয়ে গ্রামীণফোন

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে আধুনিক ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তি চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশই এখন ফাইভ-জি সেবা দিচ্ছে। এই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে তানভীর মোহাম্মদ বলেন, ফাইভ-জির জন্য প্রতিটি সাইটকে (মোবাইল টাওয়ার) ফাইবার অপটিক কেব্‌ল দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। তবে বর্তমান দেশে ফাইবার অপটিক কেব্‌ল স্থাপন করার নিয়মনীতি রয়েছে, তাতে ফাইভ-জির জন্য অবকাঠামো তৈরি করা খুব কঠিন হবে।

দেশে আগে অপারেটররা নিজেরাই ফাইবার অপটিক কেব্‌ল স্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু পরে নতুন নীতি করে এই কাজ নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) হাতে দেওয়া হয়। তানভীর মোহাম্মদ বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মতো এমন নিয়ম নেই যে অপারেটররা নিজেরা ফাইবার কেব্‌ল টানতে পারবে না। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় এনটিটিএনের পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত অপারেটরা ফাইবার টানতে পারে। আমরা মনে করি, একটা সহাবস্থান ও প্রতিযোগিতা থাকুক।’

তানভীর মোহাম্মদ আরও বলেন, ফাইভ-জি শুধু ঢাকার কিছু অঞ্চলের জন্য হবে, নাকি দেশের সব মানুষেরই এই সেবা দরকার, সেটা আগে দেখতে হবে। দেশের সবাইকে ফাইভ-জি সেবা দিতে হলে অপারেটরদের ফাইবার অপটিক কেব্‌ল স্থাপনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

তবে বাংলাদেশে এখনো ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস), বন্দর ও হাসপাতালকে যদি অনেক বেশি করে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে ফাইভ-জি প্রযুক্তি লাগতে পারে। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকের কথা চিন্তা করলে এখনো দেশে সে ধরনের পরিস্থিতি আসেনি। এ ছাড়া ফাইভ-জি প্রযুক্তি সমর্থন করে, বাংলাদেশে এমন মুঠোফোনের সংখ্যা মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ২০১৯ সালে গ্রামীণফোনকে ‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার’ বা এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করেছে। সরকারের নীতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তানভীর মোহাম্মদ বলেন, এখন যেকোনো ইস্যুতে এই এসএমপি প্রসঙ্গ চলে আসছে। কিছুদিন আগে অব্যবহৃত ৮৫০ মেগাহার্টজের স্পেকট্রামের বরাদ্দ নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, সেখানেও এসএমপি প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও স্পেকট্রাম বরাদ্দের ক্ষেত্রে এসএমপির বিষয়টি বিবেচনা করা হয় না।

গ্রামীণফোণের এই কর্মকর্তার মতে, সব ক্ষেত্রে এসএমপির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এখনো দেশের এমন কিছু স্থান আছে, যেখানে ভালো ফোর-জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সেসব স্থানে যদি গ্রামীণফোনের টাওয়ার থাকে এবং ফোর-জি সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে এসএমপির কথা বলে নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করলে তাতে বরং সাধারণ নাগরিকেরাই সেবা থেকে বঞ্চিত হন। এ বিষয়ে সবার মধ্যে বাস্তবসম্মত বিবেচনা আসবে বলে আশা করেন তিনি।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেন জানান তানভীর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কথা বলতে পারছি, কথা বলাও শুরু করেছি। সব আলোচনাই ইতিবাচক। ওনারা কথা শুনছেন। আশা করছি, তেমন কিছু সিদ্ধান্ত দেখতে পাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বিনিয়োগ নিয়ে ধারাবাহিকতা থাকবে। শুধু বড় একটা ক্ষেত্র ঠিক করে দিতে পারে যে এটা করা যাবে আর এটা যাবে না। তাহলে মার্কেট এমনিতেই এগিয়ে যাবে।’

গ্রামীণফোনের ভবিষ্যৎ উদ্যোগ সম্পর্কে তানভীর মোহাম্মদ জানালেন, আগামী তিন বছরে আইওটি এবং এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নিয়ে কাজ হবে। ডেটার ওপর প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনারও চেষ্টা থাকবে।

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: nationaltribune24@gmail.com

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.