বিজিএমইএর উত্তরা কার্যালয়ে তিন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে কারখানা মালিকদের মত বিনিময় সভা।
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে আগামীকাল রোববার সব তৈরি পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে মালিক চাইলে আইন অনুযায়ী শুধু সেই কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।
শনিবার তৈরি পোশাক খাতে চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত বিজিএমইএ কার্যালয়ে তৈরি পোশাক কারখানার মালিক, শ্রমিকনেতা, সরকারের তিন উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের উদ্যোক্তা এ কে আজাদ বলেন, “কোনো সিদ্ধান্ত তো হল না। আমরা একটি ঘোষণা চাই, কারখানা খোলা রাখব কি না।”
তিনি কারখানা মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপানারা কি কারখানা খোলা রাখবেন না কি বন্ধ করবেন? এই উপদেষ্টাদের তো আর পাওয়া যাবে না। তারা তো বারবার আসবেন না।’’
তিনি শ্রমিক নেত্রী মোরশেদা মিশুকে মঞ্চে ডাকেন বক্তব্য দেওয়ার জন্য।
এ কে আজাদ যখন মাইক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন, তখন মঞ্চ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা উঠে দাঁড়ান। চেয়ার ছেড়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন নিজেদের মধ্যে।
বিজিএমইএর সভাপতি রফিকুল ইসলামকে বারবার কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণাটি জানিয়ে দেওয়ার জন্য বলতে থাকেন এ কে আজাদ।
এক পর্যায়ে বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘‘আগামীকাল থেকে কোনো কারখানায় সমস্যা হলে রোববার থেকেই সারা দেশের সব শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল।’’
বিজিএমইএ সভাপতির ঘোষণা দিয়ে সরে গেলে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ও আদিলুর রহমানকে মাইকের সামনে আসতে পীড়াপীড়ি করলে তারা দুজনই চলে আসেন।
আবার মাইকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কথা শোনার জন্য একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি এক মাস সময় নিয়ে শ্রমিকদের কথা শুনবে। আমরা উপদেষ্টাদের কাছে শুনতে চাই এই এক মাস ফ্যাক্টরি চলবে কি চলবে না।’’
সরকার দায়িত্ব নিলে কারখানা আগামীকাল থেকে চলবে জানিয়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘‘সরকার দায়িত্ব নিলে কারখানা চালাব, নইলে আগামীকাল (রোববার) থেকে সারাদেশে কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করব।’’
ততক্ষণে মাইকের কাছে দুই উপদেষ্টার পেছনে মঞ্চে থাকা উদ্যোক্তা, শ্রমিক নেতা ও বিজিএমইএ পর্ষদের সদস্যরা দাঁড়িয়ে যান।
উপদেষ্টারা যা বললেন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এই পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “এভাবে তো হবে না। শ্রমিক, মালিক ও সরকার সবাই মিলে শিল্প বাঁচাতে হবে। মালিক পক্ষকেও বলব বেতনের সমস্যা সমাধান করতে।’’
তখন মাইক পুনরায় নিয়ে দুই উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে এ কে আজাদ বলেন, ‘‘এবার আপনারা বলেন।’’
এরপর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, ‘‘শ্রমিক প্রতিনিধিরা আছেন, তাদের কথা শুনতে চাই।’’
এসময় আশুলিয়ার এক শ্রমিক নেতাকে মাইকের সামনে আসার আহ্বান জানান তিনি। ওই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘‘আলোচনাই হল সমাধানের মূল পথ। যত সমস্যা আছে আমরা এই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধান করব। কারখানা চালু থাকবে, আমরা সবাইকে সহযোগিতা করব।’’
শ্রমিক নেতার বক্তব্য চলার সময়ে মঞ্চে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও বিজিএমইএ নেতাদের।
শ্রমিক নেতার বক্তব্যর পরে বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল আবার মাইকের সামনে এসে বলেন, ‘‘ঘোষণায় একটু কারেকশন (সংশোধন) আছে। আগামীকাল আশুলিয়ায় কোনো কারখানায় সমস্যা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হবে।’’
এরপর উপদেষ্টা আদিলুর বলেন, ‘‘কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। তিন ধরনের নিরাপত্তা টায়ার রাখা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সহায়তা করবে। এরপরও কেউ যদি সমস্যা করে তাহলে তাদের মনে রাখা হবে।’’
শ্রম ও কর্মস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “ভারতীয় গণমাধ্যম ও ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে বলা হচ্ছে ‘এখনই ভালো সময় ইনভেস্ট করার’। এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা কী করব। শিল্প কি আমাদের এখানে থাকবে, নাকি অন্য শক্তি নিয়ে নেবে?”
বকেয়া বেতনকে মূল সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটাকে আগে অ্যাড্রেস করতে হবে। অনেক মালিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ও বেতন দেন না। সরকারের প্রণোদনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ আচরণ বদলাতে হবে।… যে কোনো আন্দোলনে ষড়যন্ত্র সব সময়ই খোঁজা হয়। কিন্তু মূল সমস্যাও হচ্ছে সময় মত বেতন না দেওয়া।”
শ্রমিকদেরকে সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদেরকে সময় দিতেই হবে। আমরাও আন্দোলন করেছি, আপনাদের ন্যায্য দাবি যত দ্রুত সম্ভব সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই করব।”
বিষয় : বিজিএমইএ
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh