ইসলামী ব্যাংক
এস আলম গ্রুপের সহযোগী ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ ডিএমডিসহ আট শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বরখাস্তরা হলেন- অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ (এএমডি), উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. আকিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম ও ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া প্রধান অর্থপাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা তাহের আহমেদ চৌধুরী ও আইবিটিআরএ প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন এই লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের দাবি করেছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাশাপাশি এস আলম গ্রুপের সহযোগী সব কর্মকর্তার বরখাস্ত করার দাবি জানান ব্যাংকটির সাধারণ কর্মীরা। এ বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা।
সর্বস্তরের কর্মীদের পক্ষ থেকে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের এসইভিপি এএসএম রেজাউল করিম সই করা চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার, ব্যাংকের সব স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা, তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৭ ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত, ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গ অথবা প্রয়োজনে প্রাক্তন পরিচালকদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সমন্বয়ে বোর্ড পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।
জানা গেছে, এক দশক আগেও দেশের শীর্ষ ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। নিয়মনীতি পরিপালন, গ্রাহককে সেবা দেওয়া ও আর্থিক সূচকে অন্য সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই ব্যাংক। গ্রাহকের আস্থার কারণে স্থানীয় আমানত কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে এটি সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছর সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক–তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট এস আলমের নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেন বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ এবং ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর পদায়ন পাওয়া এক্সিকিউটিভসহ (নির্বাহী কর্মকর্তারা) যারা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি করেন। এমন অবস্থায় গত বুধবার এস আলমের আমলে পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) কায়সার আলী ব্যাংকে এলে তাকে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লুটেরাদের বের করে দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মাওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাউসার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এ সালামের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বহিষ্কারের দাবি করেছিলেন ব্যাংকের কর্মীরা।
বিষয় : এস আলম বাংলাদেশ ব্যাংক বরখাস্ত ইসলামী ব্যাংক
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh