বাংলাদেশ ব্যাংক
এসআলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের কাছে ১১০ টাকা দরে ডলার বিক্রি করে একই দিনে ১১৬ টাকা ৪৬ পয়সা দরে কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে রাষ্ট্রের ৫৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যারা এই ‘অনৈতিক’ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আর্থিক খাতের একজন বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ডলার বিক্রি করেছিল দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে। চলতি বছর ৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করার পরদিন ওই লেনদেন হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১১০ টাকা দরে ইসলামী ব্যাংকের কাছে দুটি লেনদেনে ৮২ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয় সেদিন। এর মধ্যে একটি ৫০ মিলিয়ন ডলার ও অপরটি ৩২ মিলিয়ন ডলারের লেনদেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই লেনদেনের মূল্য ছিল ৯০২ কোটি টাকা।
পরে একই দিনে ১১৬ টাকা ৪৬ পয়সা দরে দুটি লেনদেনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে একটি লেনদেন ৪৫ মিলিয়ন ডলারের, অন্যটি ৪০ মিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই লেনদেনের মূল্য ছিল প্রায় ৯৯০ কোটি টাকা।
আইএমএফের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ মে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পর ডলারের আনুষ্ঠানিক দর এক লাফে ১১০ টাকা থেকে সাত টাকা বেড়ে ১১৭ টাকা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, ডলারের দর যে ৭ টাকা বাড়বে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগেই জানতেন। ইসলামী ব্যাংককে ‘বাড়তি সুবিধা’ দিতে সেদিন দর অনিয়মের মাধ্যমে বৃদ্ধির বিষয়টি কাজে লাগানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৮২ মিলিয়ন ডলার বিক্রির লেনদেন ৯ মে হলেও কৌশলে তা আগের দিনের তারিখে দেখানো হয়, কারণ সেদিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা। অথচ ব্যাংকটি থেকে ওই ডিলের কনফারমেশন ৯ মে সন্ধা ৬টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের মেইলে পাঠানো হয়।
ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৫ লাখ ডলার কেনার লেনদেনও সেদিনই হয়েছে। সেদিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৭ টাকা।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি।
“যদি কোনো রকম অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দরকার হলে এ বিষয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন করা হবে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে পরিচালিত ডিলিং রুম থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করা হয়। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই বিভাগের দুটি শাখা কাজ করে।
এর মধ্যে ফ্রন্ট অফিস ডলার কেনাবেচার ডিল সম্পাদন করে লেনদেনের বার্তা তৈরি করে। আর মিডল অফিস সেই বার্তাটি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের অধীনে পরিচালিত ব্যাক অফিসে।
ওই বার্তার আলোকে লেনদেন ঠিকমত হয়েছে কি না এবং লেনদেনের পর অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ অর্থ থাকল, সেগুলো তদারকি করে ব্যাক অফিস।
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ওই লেনদেন দুটি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের ব্যাক অফিসে পাঠানোর পর তাদের নজরে এই অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
কেন কীভাবে এটা ঘটল, তা জানেতে ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক এক এম কামরুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
ফোন ধরেননি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাও। মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও উত্তর দেননি।
বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “এটাতো ইসলামী ব্যাংককে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পাওয়ার একসারসাইজ করে তারা এটা করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫৫ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।"
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।"
সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন
যোগাযোগ: +880244809006
ই-মেইল: [email protected]
ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭
© 2025 National Tribune All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh