× প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন ফিচার প্রবাস সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পোশাক কারখানাগুলোতে এ সপ্তাহেই পুরোদমে উৎপাদন শুরুর আশা

ন্যাশনাল ট্রিবিউন প্রতিবেদক

১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম । আপডেটঃ ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৫:১৪ পিএম

ছবি | সংগৃহীত

সরকারের পালাবদলের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকা পোশাক কারখানাগুলোতে প্রাণ ফিরছে।

অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর স্বল্প পরিসরে হলেও উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই সামগ্রিক উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন ঘিরে ৪ অগাস্ট দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারির ঘোষণা দেয় সরকার। ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায়’ এবং ‘শ্রমিক কর্মচারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে’ কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানায় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন-বিজিএমইএ।

প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে পরদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশজুড়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। দেশজুড়ে থানাগুলোতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে রাজধানী পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।

এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাবে দুই দিন বন্ধ রাখার পর বুধবার থেকে কারখানা খোলার ঘোষণা দেয় বিজিএমইএ। তবে নিরাপত্তার অভাব আর শ্রমিক-কর্মচারীরা সবাই কাজে যোগ না দেওয়ায় এখনও পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনে অধিকাংশ কারখানা।

বিজিএমইএর চাহিদা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর সমন্বিত টাস্কফোর্স খুলে নিরাপত্তা দেওয়া শুরু করায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে কিছু জটিলতা এখনও রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

রোববার বিকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলমান রয়েছে। তবে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পারায় কর্মীদের স্যালারি দেওয়া নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সেই সাথে কাঁচামাল কিনতে সমস্যা হচ্ছে।”

রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন সপ্তাহে ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না। ‘নিরাপত্তার’ কারণ দেখিয়ে শনিবার রাতে ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পণ্য পরিবহনে কোনো জটিলতা আছে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “ট্রেন বন্ধ থাকায় কমলাপুর হয়ে আমাদের যে কাঁচামাল আসত সেটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমাদের কারখানার ৫-৭ শতাংশ মালামাল কমলাপুর হয়ে আসে।”

বন্দরে পণ্য খালাসেও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পণ্যবাহী কনটেইনারের দীর্ঘ জট তৈরি হয়েছে। দ্রুত পণ্য খালাস করা জরুরি।”

তবে সার্বিকভাবে চলতি সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি।

বিজিএমইএ এর পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “নিরাপত্তা নিয়ে এখনও কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। তবে সেনাবাহিনী কাজ করছে। স্বল্পমাত্রায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। বন্দরে দীর্ঘ জট লেগে আছে। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।”


সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবাসায়ীদের বৈঠক

চলমান পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পসহ বাংলাদেশের সকল শিল্প কারখানা স্বাভাবিক নিয়মে চালু রাখতে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সেনাবাহিনী সঙ্গে ব্যাবসায়ীদের বৈঠক হয়েছে।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, সেনাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খানের সঙ্গে ওই বৈঠকে বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই, বিটিএমএসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধির এ বৈঠকে ছিলেন।

বিজিএমইএ দপ্তরে ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন বিজিএমইএ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবুর রহমান, সেনাবাহিনীর টাস্কফোর্স কমান্ডার কর্নেল আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বিজিবি ও র‍্যাব প্রতিনিধিরাও বৈঠকে ছিলেন।

খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আজকের মধ্যে গাজীপুর এলাকার ৯৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ কারখানা, সাভার-আশুলিয়া এবং ধামরাই এলাকায় ৯৯ দশমিক ৫য়া শতাংশ কারখানা, নারায়ণগঞ্জ, ডিএমপি, চট্টগ্রাম এলাকায় শতভাগ পোশাক কারখানা খুলে গেছে।”

দেশের শিল্প কারখানাগুলোর বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যাগুলো নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পোশাক শিল্প অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চলগুলোতে গার্মেন্টেসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে আসছে সন্ত্রাসের ঘটনা। ঝুট সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী দল, যারা ওইসব এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি করে এলাকার পরিবেশ অশান্ত রাখছে। মালিক পক্ষ ও শ্রমিক ভাইবোনদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। পোশাক শিল্প এদের হাতে জিম্মি।“

শিল্পকে এদের হাত হতে মুক্ত করার জন্য পোশাক ব্যবসায়ীরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান।

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে রপ্তানিসহ সকল শিল্পের পণ্যবাহী যানবাহনকে নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ করেন।

তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামায় ‘অহেতুক’ সময়ক্ষেপণ করা হয়, যার মাশুল দিতে হয় ব্যবসায়ীদের, এতে করে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও কমে যায়। একইভাবে ঢাকা বিমানবন্দরেও পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা ঘটে।

ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস দ্রুততর করার ব্যবস্থা নিতে সেনাহিনীকে অনুরোধ জানান।

গত কিছুদিনে ভাংচুরের শিকার কারখানাগুলো পরিদর্শন করে উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যও সেনাবাহিনীর উদ্যোগে গঠিত জয়েন্ট টাস্ক ফোর্সকে অনুরোধ জানান ব্যবসায়ীরা।

বৈঠকে মেজর জেনারেল মঈন খান বলেন, “এ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করা।“

তিনি বলেন, “শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে শিল্পকারখানাগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। 'কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্সের' মাধ্যমে দ্রুত ঘটনাস্থলে টিম পৌঁছে যাচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা দিচ্ছে। যার কারণে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় অভিযোগের সংখ্যা প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে কমে গেছে।”

ঝুট ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যেসব দল মাঠে তৎপর রয়েছে, তাদের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য মঈন খান বিজিএমইএ নেতাদের অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, “আর একটিও কারখানা যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা শিল্প পুলিশ দেখবে।”

সাভারের জিওসি বলেন, “সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হবে, যাতে করে কোনো শিল্প কারখানা সমস্যায় পড়লে দ্রুত সে সমস্যার সমাধান করা যায়।”

National Tribune

সম্পাদক ও প্রকাশক: আনোয়ার হোসেন নবীন

যোগাযোগ: +880244809006

ই-মেইল: [email protected]

ঠিকানা: ২২০/১ (৫ম তলা), বেগম রোকেয়া সরণি, তালতলা, আগারগাঁও, পশ্চিম কাফরুল, ঢাকা-১২০৭

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 National Tribune All Rights Reserved.